কুমিল্লার নোয়াগ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একচালা টিনের ঘরে পাঠদান!

নিজস্ব প্রতিবেদক :

কুমিল্লা নগরীর ২৭ নম্বর ওয়ার্ডের নোয়াগ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কোমলমতি শিশুশিক্ষার্থীদের পাঠদান করা হচ্ছে টিন দিয়ে নির্মিত একচালা ঘরে। সামান্য বৃষ্টিতে মেঝেতে পানি গড়িয়ে পড়ে এবং টেবিল-চেয়ার, শিক্ষার্থীদের বই-খাতা, পোশাক ও আসবাবপত্র ভিজে যায়। রোদে টিনের তাপে ঘর্মাক্ত হতে হয় শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের।

৩ বছর আগে বিদ্যালয়ের জরাজীর্ণ মূল ভবনের ছাদ ও ভিমের পলেস্তরা খসে পড়লে দুর্ঘটনা ও প্রাণহানির আশঙ্কায় নানাভাবে সহায়তা নিয়ে ওই টিনের চালা তৈরি করে পাঠদান করছেন শিক্ষকরা। এখানে একটি নতুন ভবন নির্মাণের জন্য উর্ধতন কর্তৃপক্ষের নিকট আবেদন করেও কোনো কাজ হচ্ছে না। এ অবস্থায় দিনে দিনে শিক্ষার্থী হ্রাস পেয়ে অর্ধেকে নেমে এসেছে। বিদ্যালয়ের জরাজীর্ণ ও পরিত্যাক্ত পুরাতন ভবনটি ভেঙ্গে সেখানে একটি নতুন ভবন নির্মাণ করে শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে আনার জন্য দাবি জানিয়েছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকসহ এলাকাবাসী।

সরেজমিন গিয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে, কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলার (কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের ২৭ নম্বর ওয়ার্ড) নোয়াগ্রাম এলাকায় সাবেক এমপি মনিরুল হক চৌধুরী ও তার স্বজনদের দানকৃত ৩৩ শতক ভূমির একাংশে ১৯৯৩ সালে ‘নোয়াগ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়’ এর চার কক্ষ বিশিষ্ট একটি ভবন নির্মাণ করা হয়। এ ভবনে প্রধানশিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকদের জন্য একটি অফিসকক্ষ এবং প্রাক্প্রাথমিক থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের জন্য ৩টি শ্রেণিকক্ষ রয়েছে। বিদ্যালয়ে শিক্ষক আছেন ৫ জন। এ ভবনে দুই শিফটে ক্লাস হতো।

জানা যায়, নির্মাণের কয়েক বছর না যেতেই বৃষ্টির পানিতে ছাদ ও দেয়াল চুইয়ে স্যাঁতসেতে হয়ে পড়ায় ভবনটি ব্যবহারের ক্ষেত্রে একপর্যায়ে অনুপযোগী হয়ে পড়ে। এ অবস্থায় জীবনঝুঁকি নিয়ে শিশুশিক্ষার্থীদের পাঠদান চলছিল। ২০১৮ সালে ভবনের ছাদ ও ভিমের পলেস্তরার আংশিক খসে পড়লে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা আতঙ্কে শ্রেণিকক্ষ থেকে হুড়োহুড়ি করে বের হয়ে যায়।

বিদ্যালয়ের প্রধানশিক্ষক মো. মফিজুর রহমান কুমিল্লা এসডি নিউজ কে বলেন, তিনি ২০১৮ সালের জুলাই মাসে এখানে যোগদান করেন। ঐ সময় শতাধিক শিক্ষার্থী ছিল। তখন জরাজীর্ণ ভবনে পাঠদান ব্যাহত হলে সদর আসনের এমপি (আ ক ম বাহাউদ্দিন) মহোদয় ১ লাখ টাকা দেন এবং স্থানীয় শিক্ষানুরাগী ব্যক্তিগণের সহায়তা নিয়ে ৫ কক্ষের একচালা টিনশেড তৈরি করে পাঠদান শুরু করা হয়। বর্তমানে সামান্য বৃষ্টিতে টিনের চালা দিয়ে পানি পড়ে কক্ষগুলোর চেয়ার-টেবিল ও আসবাবপত্র ভিজে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। সম্প্রতি রাতের বেলায় ২টি সিলিং ফ্যান, টিউবওয়েলের মাথা ও প্রাকপ্রাথমিকের উপকরণ চোরেরা নিয়ে গেছে।

তিনি আরো বলেন, বিদ্যালয়ের পুরাতন ভবনটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করে তা ভেঙ্গে সেখানে একটি নতুন ভবন নির্মাণের জন্য ২০১৮ সালের জুলাই মাসে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব মহোদয় ও চলতি বছরের জুনে কুমিল্লা সদর আসনের এমপি মহোদয়ের নিকট আবেদন করা হয়েছে। বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি আঞ্জুমানআরা বেগম বলেন, নোয়াগ্রাম এলাকায় একটিমাত্র সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, এলাকার শিশুদের প্রাথমিক শিক্ষার প্রতিষ্ঠান। বিদ্যালয়টির অবকাঠামোগত এমন বেহাল অবস্থার কারণে বর্তমানে শিক্ষার্থীসংখ্যা ৬৩ জনে নেমে এসেছে। নতুন ভবন নির্মাণ করা হলে শিক্ষার পরিবেশ সৃষ্টি হবে, শিক্ষার্থীও বৃদ্ধি পাবে।

কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলা শিক্ষা অফিসার প্রান্তিক সাহা কুমিল্লা এসডি নিউজ কে বলেন, বিদ্যালয়টি উর্ধতন কর্মকর্তাগণ বিভিন্ন সময়ে পরিদর্শন করেছেন এবং ভবনটি জরাজীর্ণ হওয়ায় সেখানে পাঠদান করতে নিষেধ করা হয়েছে। নতুন ভবন নির্মাণের বিষয়ে মন্ত্রণালয়ে চাহিদাপত্র পাঠানো হয়েছে, তবে এখনো অনুমোদন পাওয়া যায়নি।

     আরো পড়ুন....

পুরাতন খবরঃ

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০
১১১২১৩১৪১৫১৬১৭
১৮১৯২০২১২২২৩২৪
২৫২৬২৭২৮২৯৩০৩১
error: ধন্যবাদ!